সঞ্চয়-সভ্যতার শুরু থেকেই মানবকুলের অন্যতম অভ্যাস। গুহাবাসী মানুষ তাদের চাহিদার পানি সঞ্চয় করে রাখতো, পশু বধ করে তার চামড়া সংরক্ষণ করতো, রোদ বৃষ্টি শীত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য। প্রাণিকুলের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের রয়েছে সঞ্চয়ের অভ্যাস।
সঞ্চয় সমৃদ্ধি আনে এ কথাটি অনুধাবন করে অবিভক্ত ভারতের সিমলায় পাবলিক ডেট এ্যাক্ট ১৯৪৪ এর আওতায় সর্বপ্রথম ১৯৪৪ সালে সঞ্চয় দপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়।
পাবলিক ডেট এ্যাক্ট ১৯৪৪ এর ক্ষমতা বলে জাতীয় সঞ্চয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন সরকার জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয়স্কীমের মাধ্যমে আহরণের জন্য পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ডfকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র, বোনাস সঞ্চয়পত্র, ৩ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র, ৬ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, জামানত সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন করে। এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল দেশের জনগোষ্ঠীকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে সঞ্চয়ের মাধ্যমে আপদকালীন আর্থিক নিরাপত্তা সৃষ্টি এবং পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের স্বনির্ভর জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অপরদিকে সরকারের বাজেট ঘাটতিতে অর্থায়ন এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জাতীয় সঞ্চয় সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য।
১৯৮১ সালে Remittance সংগ্রহের জন্য ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড এর প্রচলন করা হয় এবং একই সাথে সঞ্চয় স্কীমসমূহের বিক্রি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৭টি বিশেষ সঞ্চয় ব্যুরো চালু করা হয়। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই, ১৯৮৪ সালে এ দপ্তরটি পরিদপ্তরে রূপান্তর হয়। ১৯৮৯-৯০ সালে জেলা সঞ্চয় অফিসগুলো জেলা সঞ্চয় অফিস/ ব্যুরো নামে তাদের সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করে। ২০০২ সালে আবারো Remittance আহরণের জন্য ইউ এস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউ এস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড নামে আরো দুটি বন্ডের প্রবর্তন করা হয়।
সে সময় একজন পরিচালকের অধীনে সারা দেশে জেলা সঞ্চয় অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তখন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সঞ্চয় পরিদপ্তরের কার্যক্রম বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। স্কুল ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সঞ্চয় স্ট্যাম্প সংগ্রহ ছিল সঞ্চয় কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সত্তর ও আশির দশকে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই প্রাইজ বন্ড সংরক্ষেত থাকতো। বিয়ে জন্মদিনসহ যে কোন পারিবারিক অনুষ্ঠানে প্রাইজ বন্ড উপহার হিসেবে দেয়া একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল, যার রেশ এখনো বিদ্যমান। তখন প্রচারণার ব্যাপকতায় একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয়েছিল, যার সুফল পড়ে জাতীয় অর্থনীতিতে।
এ অধিদপ্তরটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের একটি সংযুক্ত দপ্তর।
সঞ্চয় ব্যুরো/অফিসসমূহ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক ও তার অধীনস্থ ব্যাংক এবং পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে সঞ্চয় অধিদপ্তরের কার্যক্রম। এ ৩টি কার্যালয়ের সংশিস্নষ্ট অফিসসমূহ জাতীয় সঞ্চয় স্কীমের মাধ্যমে বিক্ষেপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়সমূহ আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকায় রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়। আটটি বিভাগীয় শহরে রয়েছে বিভাগীয় অফিস। চৌষট্টি জেলা সদরে রয়েছে জেলা সঞ্চয় অফিস। এছাড়াও সঞ্চয় স্কিমের চাহিদার প্রেক্ষেতে ঢাকাশহরসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ১১টি বিশেষ ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে।
সঞ্চয়-সভ্যতার শুরু থেকেই মানবকুলের অন্যতম অভ্যাস। গুহাবাসী মানুষ তাদের চাহিদার পানি সঞ্চয় করে রাখতো, পশু বধ করে তার চামড়া সংরক্ষণ করতো, রোদ বৃষ্টি শীত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য। প্রাণিকুলের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের রয়েছে সঞ্চয়ের অভ্যাস।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস